আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
২। আল্লামা জারুল্লাহ জামাখশারী (৪৬৭-৫৩৮ হি:) বর্ণনা করেছেন যে-যালিকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল সেই ফজল, আল্লাহতায়ালা যা মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:)- কে দান করেছেন এবং সেই ফজল হল তাঁর স্বীয় জমানার লোকদের জন্য (কিয়ামত পর্যন্ত)। এবং পূর্ব যুগের মানুষের জন্যও নবী হওয়া। এটাই আল্লাহর ফজল। তিনি যাকে চান এর দ্বারা ভূষিত করেন। (জামাখশারী : আল কাশশাফ আন হাকায়েকে গাওয়ামিজিত তানজীলে ও উয়ূনিল আকাবিলি ফী বুজুহিত তাবীল, খÐ ৪, পৃষ্ঠা ৫৩০)।
৩। আল্লামা তাবরাছি (মৃত্যু ৪৫৮ হি:)। উল্লিখিত আয়াতে কারিমার শব্দাবলীর উদ্দেশ্য এভাবে বর্ণনা করেছেন :
অর্থাৎ-তিনিই শ্রেষ্ঠ ইহসানকারী যা তিনি স্বীয় মাখলুকের উপর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রেরণের মাধ্যমে করেছেন। মোট কথা, রাসূলে মুহতাশাম (সা:)-কে মানবতার দুনিয়ার দিকে প্রেরণ করাই আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ ফজল ও ইহসান (তাবরাছি : মাজমাউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, খÐ ১০, পৃষ্ঠা ৪২৯)।
৪। আল্লামা ইবনে জাওযী (৫১০-৫৭৯ হি:) বর্ণনা করেছেন : অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বহু বড় অনুগ্রহকারী এবং (তার এই ফজল) মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:)-এর প্রেরণের মাধ্যমেই হয়েছে। মোটকথা, রাসূলে মুয়াজ্জাম (সা:)-এর মানবক’লে তশরীফ আনয়ন এবং রাসূল হিসেবে প্রেরণই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার বড় ফজল বা অনুগ্রহ এবং উপহার। (ইবনে জাওযী : যাদুল মাছির ফী এলমিত তাফসীর, খÐ ৮, পৃষ্ঠা ২৬০)।
৫। ইমাম নাছাফী (মৃত্যু ৭১০ হি:) বলেছেন- ‘জালিকা-এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই ফজল, যা আল্লাহতায়ালা মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:)-কে দান করেছেন এবং ইহা তাঁর যুগের লোকদের জন্য (কিয়ামত পর্যন্ত) এবং পূর্ববর্তী লোকদের জন্যও নবী হওয়া বুঝায়। (নাছাফী : মাদারেকুত তানজিলে ওয়া হাকায়েকিত তাবীল, খÐ ৫, পৃষ্ঠা-১৯৮)।
হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর আত্মপ্রকাশ এবং রাসূল হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ তাদের সকলকে স্বীয় রহমতের ছায়ায় গ্রহণ করা হয়েছে, যারা তাঁর প্রেরণের পূর্বে ছিল এবং যারা তাঁর মৃত্যুর পর কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগমন করবে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পূর্ববর্তী জমানায় আগমনকারী এবং পরবর্তীতে আগমনকারী লোকজন কেয়ামত প্রতিষ্ঠা হওয়া পর্যন্ত তাঁর রেসালাতের ফয়েজ ও বরকত দ্বারা সমৃদ্ধশালী হবে- এটাই হচ্ছে জালিকা ফাদলুল্লহি ইউতিহি মাইয়্যাশাউ-এর তফসীর, যাতে ইমাম নাছাফী উভয় অর্থের সমন্বয় করেছেন। আর ‘ওয়া আখারিনা মিনহুম লামা ইয়ালহাকু বিহিম’ বাক্যে এই সকল লোক শামিল আছেন যারা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পরে জন্মগ্রহণ করবে এবং তারা তাঁকে দেখতে পাবে না। তিনি তাদের জন্যও রাসূল হবেন এবং তারাও ওই সকল লোকের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে যাদের জন্য ফালইয়াফরাহু-এর হুকুম করা হয়েছে। সুতরাং তাদের জন্যও আবশ্যক যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর শুভ জন্মের ওপর খুশি উদযাপন করবে যে, হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর আত্মপ্রকাশ ওই ধূলার ধরণীতে শুভ সংবাদ হয়ে এসেছে, যারা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ শতাব্দীতে আগমন করেছে, করছে এবং করতে থাকবে। এই সিলসিলা কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
৬। ইমাম খাজেন (৬৭৮-৭৪১ হি:) আল ফাদলুল আজীম-এর তফসীর করতে গিয়ে লিখেছেন যেÑ
ইহার দ্বারা আল্লাহতায়ার উদ্দেশ্য হল, স্বীয় মাখলুকের ওপর ফযল ও অনুগ্রহ, যা তিনি স্বীয় রাসূল হিসেবে মোহাম্মদ (সা:) কে প্রেরণ করেছেন। (খাজেন : লুবাবুত তা’বীল ফী মায়ানিয়িত তানজীল, খÐ ৪, পৃষ্ঠা-২৬৫)।
৭। আবু হাইয়্যান উন্দুলুসী (৬৪২-৭৪৯ হি:) উল্লিখিত আয়াতের শব্দাবলীর উদ্দেশ্যের দিকে ইশারা করে লিখেছেন :
অর্থাৎ জালিকা শব্দ দ্বারা হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর নব্যুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্বসহ পৃথিবীতে আবির্ভাবের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। (আবু হাইয়্যান : তাফসীরূল বাহরিল মুহীত : খÐ ৮, পৃষ্ঠা ২৬৫)।
৮। ইমাম ইবনে কাছির (৭০১-৭৭৪ হি:) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেছেন : অর্থাৎ ইহার দ্বারা উদ্দেশ্য হল সেই মর্যাদাপূর্ণ নব্যুয়ত যা আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা:)- কে দান করেছেন এবং (ইহার দ্বারা উদ্দেশ্য) সকল বৈশিষ্ট্যাবলী, যার দ্বারা তাঁর (সা:) প্রেরণের মাধ্যমে উম্মতকে প্রদান করা হয়েছে। (ইবনে কাছির : তাফসীরূল কুরআনিল আজীম, খÐ-৪, পৃষ্ঠা-৩৬৪)।
সুতরাং হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর সৌভাগ্যপূর্ণ আগমন এবং নব্যুয়ত উভয়টিই মূলত আল্লাহতায়ালার বহু বড় ফজল ও অনুগ্রহ।
৯। ইমাম সুয়ূতী (৮৪৯-৯১১ হি:) লিখেছেন :
অর্থাৎ এই আয়াতে ফজল দ্বারা উদ্দেশ্য হল হুজুর নবীয়ে আকরাম (সা:) এবং তাঁর (সা:) সাথে উল্লিখিত লোকজন। সুয়ূতি : তাফসীরুল জালালাইন : পৃষ্ঠা ৫৫৪)।
১০। আল্লামা আলুসী (১২০৭-১২৭০ হি:) এই শব্দের মর্মের প্রতি ইশারা করত : লিখেছেন যে, অর্থাৎ জালিকা এই বিশেষত্বের প্রতি ইশারা করে যে, এই সূরার প্রারম্ভে (শুরুতে) যা উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূলে মুয়াজ্জাম হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:) উম্মীগণ এবং তাঁর পরে আগমনকারীদের মধ্যে তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং তাদের পবিত্র করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। এখানে জালিকা দূরবর্তী ইশারা তাজীমের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ-নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ। (আলূসী : রুহুল মায়ানী ফী তাফসিরিল কোরআনিল আজীম ওয়াছ ছাবইল মাছানী, খÐ-২৮, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৫)।
১১। শায়খ আহমাদ মুস্তফা মুরাগী (১৩০০-১৩৭২ হি:) উল্লিখিত আয়াতের তফসিরে লিখেছেন যে, আল্লাহতায়ালা স্বীয় মাহবুব রাসূল (সা:)-কে বিশ্ব মানবতার প্রতি পবিত্রকারী, পরিচ্ছন্নকারী, হেদায়েতদানকারী, বিদ্যাদানকারী করে প্রেরণ করে তার নিজ বান্দাহদের প্রতি ফজল ও ইহসান করেছেন। (আহমাদ মুস্তাফা : তাফসীরুল কুরআনিল কারীম, খÐ-১০/২৮, পৃষ্ঠা-৯৬)। (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ